সাম্প্রতিক কালে দেশের সব চেয়ে আলোচিত ঘটনা স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক আবদুল মালেক।নানান অবৈধ কর্মকাণ্ড ও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গাড়ি চালক আব্দুল মালেককে পৃথক মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। কিভাবে তার এই উত্থান? আর সামান্য একজন গাড়ি চালক হয়ে কোন পন্থায় তিনি কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়েছেন? এমন অসংখ্য প্রশ্ন এখন জনমনে। মালেক গ্রেফতার হওয়ার পর বাড়ির রাজকীয় ডিজাইনের দরজার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। ফেসবুকে অনেকেই লিখছেন, আমাকে স্বাস্থ্যের ড্রাইভার বানিয়ে দাও। আমি ড্রাইভার হতে চাই।
কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, একজন ড্রাইভারের যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে ডিজি, সচিব, চেয়ারম্যানদের অবস্থা কি হবে?
অষ্টম শ্রেণি পাস আবদুল মালেক অধিদফতরের চাকরির পাশাপাশি নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাতেন। অবৈধ অস্ত্র ও জালনোটের কারবার ছাড়াও চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। তুরাগ থানার দক্ষিণ কামারপাড়ায় দুটি সাত তলা বিলাসবহুল ভবন, ধানমন্ডির হাতিরপুলে সাড়ে ৪ কাঠা জমিতে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন রয়েছে তার। এছাড়া দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম গড়ে তুলেছেন মালেক। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে তার। ফেসবুকে নেটিজেনরা এমন দুর্নীতিবাজদেদের সম্পদ ফিরে এনে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, শুধু গাড়িচালক মালেক নয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমন ৪৫ কোটিপতি মালেকের নাম রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর তালিকায়। এ তালিকায় নাম রয়েছে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীও। প্রত্যেকের নামেই রয়েছে অস্বাভাবিক অর্থ, বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার ও ক্ষমতার অপব্যবহার। রয়েছে অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক আবদুল মালেককে দুর্নীতির অভিযোগে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
চলুন জেনে নেয়া যাক কে এই মালেক-
নাম তার আব্দুল মালেক। বয়স ৬৩। পেশায় তিনি একজন গাড়িচালক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের (শিক্ষা) গাড়ি চালানোর দায়িত্ব ছিল তার। কিন্তু দীর্ঘদিন তিনি গাড়িটি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক বাড়ি-গাড়িসহ শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তার।
শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে অধিদফতরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন এই মালেক। বিশেষ করে অধিদফতরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য তার প্রধান কাজ। কোনো কর্মকর্তা যদি তার সুপারিশ না শোনতেন তাহলে তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করাসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটিয়েছেন একাধিকবার। একটি সংস্থার প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
সম্প্রতি র্যাবের প্রাথমিক গোয়েন্দা অনুসন্ধানে রাজধানীর তুরাগ এলাকায় আব্দুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেকের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকার ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি তার এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট দেখিয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন এবং জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। তার ভয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে সর্বদা আতঙ্ক বিরাজ করে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা এবং জাল টাকার ব্যবসা করে আসছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ও জালনোট ব্যবসাসহ অস্ত্রের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শনপূর্বক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
প্রভাব খাটিয়ে অধিদফতরকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছিলেন মালেক। সে সরকারি ড্রাইভার এসোসিয়েশনের সভাপতি। এই সভাপতি থাকাকালিন সময়ে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, পাজেরো গাড়িটি দিয়ে মালেক নিজের ডেইরি ফার্মের দুধ নিয়ে আসতো। অফিসে ঢুকানোর আগে গাড়ি থেকে মালামাল নামিয়ে পরে অফিসে আসতো সে। এই ঘটনা অফিসের প্রায় সবাই জানে। কিন্তু কেউ মুখ খোলে না। কারণ বড় কর্মকর্তাদের খুব কাছের মানুষ মালেক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধুমাত্র মহাপরিচালকের গাড়িই নয়, আবদুল মালেক স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি পিকআপ (ঢাকা মেট্রো- ঠ- ১৩-৭০০১) নিজের গরুর খামারের দুধ বিক্রির কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এই গাড়িটি চালায় মাহবুব নামে একজন চালক। এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি মাইক্রো (ঢাকা মেট্রো-চ-৫৩-৬৭৪১) পরিবারের সদস্যদের জন্য ব্যবহার করতেন আবদুল মালেক। এই গাড়িটিও কামরুল নামে একজন চালককে দিয়ে ব্যবহার করাতেন তিনি।