বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের শিশুকন্যাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা ছয়জনকে শনাক্ত করে নজরদারিতে রেখেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।
এই ছয়জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ হেন মন্তব্যকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
শনিবার দুপুরে (২২ আগস্ট) সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের এডিসি মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের গর্ব সাকিব আল হাসানের শিশুকন্যাকে নিয়ে কিছু বিকৃত মানসিকতার লোক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে মন্তব্যকারী ছয় ফেসবুক ইউজারকে আমরা শনাক্ত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি নথিভুক্ত করেছি।
তিনি বলেন, আমরা চাই না সাধারণ কোনো ফেসবুক ব্যবহারকারী এ হেন অপকর্মে জড়িয়ে যাক এবং তদন্তে কোনো সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারী বিপাকে পড়ুক। সে জন্যই সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
এডিসি মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যগুলো যেহেতু ফেসবুকের আইডি দিয়ে করা, সেহেতু আইডিগুলোর পেছনে কারা রয়েছেন, সেসব প্রকৃত অপরাধীকে আমরা ধরতে চাচ্ছি। সে কারণে আইডিগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকগুলো নাম ভাসছে, সেগুলোও আমরা আমলে নিচ্ছি। সেগুলো ফেক আইডি হতে পারে, আবার কাউকে ফাঁসানোর জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে। তাই একেবারে প্রযুক্তিক জায়গা থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করছি। অপরাধী যেই হোক সাইবার আইনে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিষ্টাচার বজায় রাখার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, মিথ্যা তথ্য প্রচার, সম্মানহানির চেষ্টা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিষোদগার বা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো অপরাধ। এ ব্যাপারে নজরদারি করছে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের চৌকস দল।যারা এ ধরনের মন্তব্য করেছে তাদের পালানোর সুযোগ নেই, কারণ তাদের ফুটপ্রিন্ট রয়ে গেছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
সাকিব আল হাসানের শিশুকন্যাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যকারীদের নিয়ে মুখ খুলেছেন সাকিব আল হাসানের স্ত্রী উম্মে আল হাসান শিশির। তিনি বাজে মন্তব্যকারীদের চেয়ে বরং যারা ওই মন্তব্যগুলো ফলাও করে প্রচার করেছেন তাদের ওপরই বেশি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
শুক্রবার (২১ আগস্ট) রাতে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, কি হচ্ছে তা আমি খেয়ালও করিনি কারণ, এতে আমরা বিব্রত হয়নি। পাবলিক ফিগার হিসেবে আমাদের অনেক ফ্যান ফলোয়ার্স আছেন, অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী যেমন আছেন তেমনি কিছু লোক আছেন যারা পছন্দ করেন না; এটা সম্পূর্ণ একটা প্যাকেজের মতো। আমরা সবসময় মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকি এবং এটা ভালো। বিশ্বের অনেক সেলেব্রিটি অনেক গুরুতর বিষয় ফেস করেন কিন্তু অন্য দেশগুলোতে তাদের এতটা সময় নেই যে, হাজারো ভালো কমেন্টের মধ্য থেকে ৪/৫টা খারাপ কমেন্ট খুঁটে খুঁটে বের করবে।
তিনি বলেন, আমি ওই সকল মন্তব্যকারীদের নিয়ে ভাবছি না কারণ সেগুলোতে আমরা বিব্রত হয়নি বরং ওই সকল পেজের এ্যাডমিনদের নিয়ে ভাবছি যারা ওই চারটা কমেন্ট খুঁজে বের করে ছোট্ট একটা বিষয়কে বড় করে তুলেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। চলুন, আপনাদের পেজের কিছু উন্নতি হোক! আমাদের মোটিভ এবং জীবনযাপনে কোনকিছুই প্রভাব ফেলবে না কারণ, এই তুচ্ছ বিষয়টা আমাদের মোটেও বিব্রত করেনি।
বর্তমানে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন সাকিব আল হাসান। সেখানেই স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন ঘুরতে। সম্প্রতি তার পোস্ট করা একটি ছবিতে দেখা যায়, সূর্যমুখী বাগানে দাঁড়িয়ে আছেন হাস্যোজ্জ্বল আলাইনা। চুলে গোঁজা দুটো ফুল। আর সেই ছবিতেই নানাধরনের বাজে মন্তব্য করতে দেখা গেছে কয়েকজনকে।
বাজে কমেন্টগুলোসহ সাকিব-কন্যার ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শাহিন আলম, ড্রিমলেস কিং রেজোয়ান, আবরার শাহরিয়ার, শাহ মো. আবদুল্লাহ, নিউটন তরফদার ও বিনিয়াস হাসদা নামের আইডি থেকে বাজে মন্তব্যগুলো করা হয়। এরপরই ছবিটি ডিলিট করে দেন সাকিব আল হাসান।
এই ঘটনায় অনেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিচার দাবি করেন। বিষয়টি আমলে নিয়েই কমেন্টকারীদের খোঁজ নেয়া শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।