মহামারি করোনায় আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঝুঁকিপূর্ণ সময় পার করছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রকৃত সময় নিয়ে ধোঁয়াশা এখনো কাটেনি।এদিকে, স্থানীয় সময় শনিবার নতুন এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, দ্রুতই নির্বাচনী প্রচারণায় ফেরার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।
গত ১ অক্টোবর মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
শনিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন, তিনি হাসপাতালে আসার সময়ে অসুস্থ বোধ করলেও এখন ভালো আছেন। হোয়াইট হাউসের চিকিৎসকরাও একই দাবি করেছেন। তবে চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডোস বলছেন ভিন্ন কথা। তাকে উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টা কঠিন সময় পার করেছেন ট্রাম্প। সামনের ৪৮ ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি ঝুঁকিমুক্ত নন।
শুক্রবার মৃদু উপসর্গ দেখা দেওয়ায় টন মেরিল্যান্ডের ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। সমর্থকদের পাশাপাশি তার শারীরিক অবস্থা জানতে উৎকণ্ঠিত গোটা বিশ্ব। তবে শনিবার সবাইকে আশ্বস্ত করে ট্রাম্প টুইটারে জানান, হাসপাতালে আসার সময় অসুস্থ থাকলেও এখন আগের চেয়ে ভালো বোধ করছেন তিনি। একইদিন ট্রাম্পের ব্যক্তিগত চিকিৎসক শন কনলি বলেন, এখন পর্যন্ত ট্রাম্পকে অক্সিজেন দিতে হয়নি এবং অনেকটাই সুস্থ রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে চিকিৎসকের এ বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরেই হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডোসের বক্তব্যে ট্রাম্পের শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। ওয়াল্টার রিড হাসপাতাল প্রাঙ্গণে মিডোস সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৪ ঘণ্টা প্রেসিডেন্টের অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক ছিল। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা তার চিকিৎসার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে। এখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থতার পথে নেই।
করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু এবং দেশটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই মহামারিকে ট্রাম্প ততোটা গুরুত্ব দেননি। ৩ নভেম্বর ভোট সামনে রেখে গত কয়েক সপ্তাহে নিয়মিতভাবে তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনি সফর করে আসছিলেন। সংক্রমণ এড়াতে চিকিৎসকরা যেখানে মাস্ক ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন, সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে মাস্ক পরতে অনাগ্রহ দেখিয়ে এসেছেন, এমনকি যারা মাস্ক পরছেন, তাদেরও সমালোচনা করতে ছাড়েননি।
শন কনলি জানিয়েছেন, ট্রাম্পকে ইতোমধ্যে রেমডেসিভিরের পাঁচ দিনের কোর্সের একটি ডোজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাকে রেজেনেরন ফার্মাসিউটিক্যালের পরিক্লোনল অ্যান্ডিবডি ককটেল (REGN-Cov2) দেওয়া হয়েছে। ওই ওষুধটি শরীরে ভাইরাসের বিস্তার হ্রাস করে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সহায়তা করে। পাশাপাশি জিংক, ভিটামিন ডি, ফ্যামোটিডিন, মেলাটোনিন ও অ্যাসপিরিন দেওয়া হচ্ছে ট্রাম্পকে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এক টুইটে নিজের এবং ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের (৫০) করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। বয়স ও ওজনের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছেন তিনি।
জানা যায়, অসুস্থ হলেও হাসপাতালে যেতে চাননি ট্রাম্প। কিন্তু তাকে অনেকটা জোর করে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে, প্রেসিডেন্টের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী ঘটনা-প্রবাহে হোয়াইট হাউজের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের অসুস্থতায় তার জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামা।
এদিকে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে রিপাবলিকান দলের সব ধরনের প্রচারণা ও কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও। তারা বলেন, আমরা উনাকে নিয়ে শঙ্কিত। আশা করছি এখন উনি উপলব্ধি করতে পারবেন করোনা ভাইরাস আসলেই সবার জন্যে অত্যন্ত মারাত্মক একটি অসুখ। তারা আরও বলেন, জানি না ভোটের কি অবস্থা হবে এখন। যদি ভোটগ্রহণ হয় আশাকরি সবাই ভোট দিতে পারবো।