উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে কুয়েতের রাজনৈতিক রদবদল হয় ভিন্নভাবে। দেশটিতে রাজপরিবারের পাশাপাশি একটি সংসদীয় ব্যবস্থা চালু আছে। ক্ষমতায় আসতে সংসদীয় সমর্থন দেশটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুই তিন শতাংশ ভোটে একজন আমিরকে অপসারণের ক্ষমতা আছে সংসদীয় কমিটির। এরই মধ্যে কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমাদ আল-জাবের আল-সাবাহ মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর )যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে কুয়েতের রাজপরিবার বিষয়ক মন্ত্রী শেখ আলি জারাহ আল-সাবাহ নিশ্চিত করেন।
২০১৯ সাল থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন শেখ সাবাহ। চলতি বছরের জুলাইতে মার্কিন বিমানবাহিনীর একটি বিমানে করে তাকে কুয়েত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় উড়িয়ে নিয়ে আসা হয়।
শেখ সাবাহের অসুস্থতার সময় দেশটির আমিরের দায়িত্ব পালন করেন তার সৎ ভাই নাওয়াফ আল-আহমাদ আল-সাবাহ। ৮৩ বছর বয়সী নাওয়াফ আল-আহমাদ কুয়েতের যুবরাজ। ফলে সাংবিধানিকভাবে তিনি দেশটির ভারপ্রাপ্ত আমির ছিলেন গত কয়েক মাস ধরে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক সংস্থা কার্নেগি এন্ডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস কুয়েতের পরবর্তী আমির নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।
এতে দেখা যাচ্ছে, শেখ সাবাহর মৃত্যুর পর যুবরাজ নাওয়াফকেই ধরা হচ্ছে দেশটির নতুন আমির। কয়েক দশক ধরে রাজপরিবারে শীর্ষ পদে আসীনদের মধ্যে একজন তিনি।
প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রীও হন। দেশটির সামরিক বাহিনীর একজন কমান্ডারও তিনি।
আরব দেশটির সাবাহ পরিবারের রেওয়াজ অনুসারে ২০০৬ সালে যুবরাজের দায়িত্ব পান তিনি। সে বছর তার বাবা শেখ জাবের আল-সাবাহের মৃত্যুর পর আমির হন সৎ ভাই শেখ সাবাহ।
শেখ জাবের আল-সাবাহের মৃত্যুর পর আমির নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংকটে পড়েছিল কুয়েত। সংসদীয় সমর্থনে ক্ষমতায় আসেন রাজপরিবারের আল সালেম ধারার শেখ সাদ আল-সালেম আল সাবাহ।
তবে দায়িত্ব গ্রহণের নয় দিনের মাথায় শারীরিক অক্ষমতার কারণে তাকে সরে দাঁড়াতে হয়। তখন ক্ষমতার পটপরিবর্তনে আমির হন আল জাবের ধারার শেখ সাবাহ।
কুয়েতের রাজপরিবারকে বলা হয় সাবাহ পরিবার। এ পরিবারের দুইটি ধারা আল জাবের এবং আস সালেম। দশকের পর দশক ধরে এ দুই ধারার সদস্যরা কুয়েত শাসন করে আসছেন। সদ্য প্রয়াত আমির শেখ সাবাহ আল-আহমাদ এবং তার উত্তরাধিকারী নাওয়াফ আল-আহমাদ দুইজনেই আল জাবের ধারার।
রাজপরিবারের অন্যান্য প্রভাবশালী সদস্যরা সংসদীয় সমর্থনের দিক দিয়ে যুবরাজ নওয়াফকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারেন বলে ইতিমধ্যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শোনা যাচ্ছে শেখ নাসের মোহাম্মদ আল-আহমাদ আল-জাবের আল-সাবাহর নাম। তিনিও আল জাবের ধারার।
শেখ সাবাহ তার অধীনে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন শেখ নাসেরকে। ২০১১ সাল পর্যন্ত কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনিই দেশটির একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, যিনি যুবরাজ ও আমির হননি। জাতিসংঘে কুয়েতের প্রতিনিধি ছাড়াও কয়েকটি দেশে রাষ্ট্রদূত ছিলেন তিনি। দেশে সামলেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ও।
কুয়েতের উত্তরাঞ্চলে সিল্ক সিটির মতো মেগাপ্রজেক্ট তার প্রস্তাবিত। উচ্চভিলাসী দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি দুর্নীতিবিরোধী মনোভাবের কারণে দেশটির ব্যবসায়ী মহলের কাছে প্রশংসিত শেখ নাসের।
৭২ বছর বয়সী শেখ নাসের হচ্ছেন যুবরাজ নাওয়াফের চেয়ে বয়সে ১১ বছর ছোট। যুবরাজ নাওয়াফের বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে কুয়েতের নতুন আমির হয়ে যেতে পারেন শেখ নাসের।
কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল আহমাদ আল-সাবাহের ৯১ বছর বয়সে মৃত্যুতে দেশটিতে আজ থেকে ৪০ দিনের শোক প্রকাশের ঘোষণা, ৩ দিনের জন্য অফিসিয়াল কাজ বন্ধ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আনাস আল-সালেহ মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন, আজ থেকে কুয়েতে ৪০ দিনের শোক এবং সরকারী দফতর ৩ দিনের জন্য বন্ধ থাকবে এবং পতাকাগুলি সরকারী ভবনে আধমস্তি উড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।